আপনার লেখা প্রকাশ করতে চান?
আমরা সবসময়ই নতুন চিন্তাকে স্বাগত জানাই। আপনার লেখা প্রকাশের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
লেখা জমা দিনবইয়ের নামঃ দেয়াল
লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ
বইয়ের ধরণঃ রাজনৈতিক উপন্যাস
প্রকাশনাঃ অন্যপ্রকাশ
প্রচ্ছদঃ মাসুম রহমান
প্রথম প্রকাশঃ অমর একুশে বইমেলা, ২০১৩
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৯৬
অতীতে ঘটে যাওয়া সত্যের বর্ণনার নাম ইতিহাস হলেও সবসময় সত্যবচন ইতিহাসের পাতায় স্থান পায় না। কখনো কখনো সত্যের আড়ালে আধা সত্য, এমনকি অসত্য পর্যন্ত সত্যের অন্তরালে সগৌরবে মাথা উঁচু করে নিজের উপস্থিতি জানান দিতে সদা তৎপর থাকে। ইতিহাস এদেরকে নিজ বক্ষে ঠাঁই না দিলেও কখনো কখনো এসব অপ্রিয় সত্য নিজ শক্তির জোরে সকল বৈরিতাকে দূরে ঠেলে প্রভাতের সূর্যের ন্যায় সত্যাকাশে উদিত হয়।
এমনই এক ইতিহাসের তলায় চাপা পড়া সত্যকে পাঠকের সামনে তুলে ধরতে জননন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ লিখলেন তার জীবনদশায় লেখা শেষ উপন্যাস “দেয়াল”। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার চিত্রকে সাহিত্যের রূপ দিতে ঔপন্যাসিক কিছু কল্পিত চরিত্রের আশ্রয় গ্রহণ করলেন। ইতিহাস অবিকৃত রেখে এসব কল্পিত চরিত্রের সাথে বাস্তব, প্রাসঙ্গিক চরিত্রের সমন্বয় কেবল বইটির সাহিত্য মানে নতুন মাত্রা-ই যোগ করেনি; বরং উঁচু দরের সাহিত্যকর্ম হিসেবে এর যথার্থতা প্রমাণ করতে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করেছে। উল্লেখ্য যে, এ উপন্যাসের আলোচ্য বিষয়বস্তু মাথায় রেখে অনেক সাহিত্যবিশারদ একে “রাজনৈতিক উপন্যাস” বলে আখ্যা দিলেও কেউ কেউ এ শ্রেণীকরণ মানতে নারাজ। বইটি হুমায়ূন আহমদের মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হওয়ায় এর ভূমিকা ড. আনিসুজ্জামানের লেখা। এ বইটির ভূমিকা লিখতে গিয়ে বাংলা সাহিত্যের এ অধ্যাপক এটাকে রাজনৈতিক উপন্যাস বলে মানতে অস্বীকার করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি উপন্যাসের সংজ্ঞা সম্পর্কে বঙ্কিমচন্দ্রের উদ্ধৃতি উল্লেখ করেছেন বইটির ভূমিকাতে। বইটি সম্পর্কে নিজের মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে একই পথে পা চালিয়েছেন আরেক জনপ্রিয় সাহিত্যবিশারদ সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম। এসব বিষয় বিবেচনা করলে, এটাকে যেমন ঠিক পুরোপুরি ইতিহাসের প্রামাণ্য গ্রন্থ বলা চলে না, তেমনি আর দশটা সাধারণ সাহিত্যকর্মের ন্যায় পুরোদস্তুর উপন্যাস বলেও চালিয়ে দেওয়া যায় না। বরং উভয় পক্ষের সঙ্গতি রক্ষাকারী হিসেবে এটাকে “ইতিহাসের আশ্রয়ে রচিত উপন্যাস” বলে আখ্যা দেওয়াই অধিকতর শ্রেয় বলে আমি মনে করি।
উপন্যাসের গল্প শুরু হয় অবন্তীকে দিয়ে। ছোটবেলায় মা-বাবার বিবাহ বিচ্ছেদের সুবাদে দাদার কাছে বড় হতে থাকে সে। রক্ষণশীল মানসিকতার মানুষ সরফরাজ খান তার প্রিয় নাতনীকে কখনোই চোখের আড়াল হতে দেন না। দেশের ক্রান্তিকালে তখন দেশের মানুষ একপ্রকার নিরাপত্তা সংকটে ভুগছিল। অনেক ক্ষেত্রে মানুষের জীবনের-ই যেখানে নিরাপত্তা নেই, সেখানে দেশের নিরাপত্তা কী করে থাকবে? তার পুরো পৃথিবী তাদের প্রকাণ্ড বাড়ির চার দেয়ালে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। বাড়িতে বাসিন্দা সংখ্যায় পাঁচ জন হলেও তার আপনজন বলতে এক বৃদ্ধ পিতামহ। বাইরের জগতের মধ্যে একমাত্র তার জন্মদাত্রী মায়ের সাথে পত্রালাপের সুযোগ আছে। এছাড়া আর কারো সাথে তার যোগাযোগের সুযোগ নেই বললেই চলে। তবুও সে পত্র সরফরাজ খান নামক এক জীবন্ত সেন্সর বোর্ডের কাঁচি পেরিয়ে তার হাতে পৌঁছয়। বস্তুত পুরো বাহ্যিক জগতের কোনো কিছু তার হাতে যেতে হলে এ প্রক্রিয়াকে অবহেলা করে যাবার বিন্দুসম সুযোগ পর্যন্ত নেই। এভাবে চলতে চলতে দেশে বিভিন্ন সামরিক অভ্যুত্থান শুরু হয়। নেহায়েত ক্ষমতা দ্বন্দ্ব থেকে একের পর এসব অভ্যুত্থানের সূত্রপাত ঘটতে থাকে। দেশের রাজনৈতিক আকাশে তখন দুর্যোগের ঘনঘটা। দেশের এমন ক্রান্তিকালে নিরাপত্তার অজুহাতে সরফরাজ খান নাতনিকে নিয়ে নিজের গ্রামে ফিরে যান। সেখানে গিয়ে ঘটনাচক্রে অবন্তীর সঙ্গে জাহাঙ্গীর নামক স্থানীয় এক হুজুরের বিয়ে হয়ে যায়। এ বিয়ের পর ঘটনার মোড় নতুন দিকে বাঁক নিতে শুরু করে। এরপর কী ঘটে অবন্তীর জীবনে? সে কি পারে জাহাঙ্গীরকে নিজের পতিদেবতার মর্যাদা দিতে? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে পড়তে হবে বইটি। এর পাশাপাশি শফিক নামক এক সাধারণ যুবকের সাদামাটা জীবনের গল্প একই সমান্তরালে এগিয়ে চলেছে। পেশায় সে অবন্তীর গৃহশিক্ষক হলেও আরো কিছু কাজ করে দিন কাটায় সে। এভাবে এগিয়ে চলে উপন্যাসের গল্প। এছাড়া নানা প্রসঙ্গক্রমে উঠে এসেছে তৎকালীন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের কথা ও তাদের বক্তব্য। এদেরকে উপন্যাসের চরিত্রে রূপদানের মধ্য দিয়ে ঔপন্যাসিক যেন তাদেরকে জীবন্ত চরিত্র রূপে তুলে এনেছেন উপন্যাসের গল্পে।
এবার আসি চরিত্র বিশ্লেষণে। উপরোক্ত আলোচনা পাঠ শেষে এতক্ষণে নিশ্চয়ই প্রিয় পাঠকের বুঝতে বাকি নেই যে এ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রে কে রয়েছে! জ্বী, হ্যাঁ! আপনি ঠিকই ধরেছেন এতক্ষণে। এ কথা বলা বাহুল্য যে, এ উপন্যাসের মূল ভূমিকায় রয়েছে অবন্তী। পাকিস্তান পুলিশের প্রাক্তন কর্মকর্তা সরফরাজ খানের একমাত্র নাতনি সে। ছোটবেলা থেকে দাদাজানের কাছেই তার বেড়ে ওঠা। আগাগোড়া রক্ষণশীল মানসিকতার একজন মানুষ সরফরাজ খান। সে সুবাদে বাইরের জগতে অনেক কিছুই অবন্তীর কাছে অধরা স্বপ্ন হয়ে রয়ে যায়। বাস্তবতা এত নির্মম হলেও অবন্তী এক প্রতিবাদী নারীর নাম। অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার এক প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরের নাম অবন্তী। বাংলার তৎকালীন নারী সমাজের আর দশটা সাধারণ নারীর মত মুখ বুজে অন্যায়, অবিচারকে প্রশ্রয় দেওয়া যেন তার স্বভাববিরুদ্ধ! ন্যায়ের প্রশ্নে সুযোগ পেলে সে কাউকেই ছেড়ে দেয় না; এমনকি নিজের আশ্রয়দাতা পিতামহকেও না! এ থেকে স্পষ্টতর হয়ে ওঠে তার চরিত্রের কঠোরতার দিকটি। এত কঠিন হৃদয়ের অধিকারিণী-ও যে কখনো কখনো সব ভুলে অত্যন্ত কোমল হয়ে উঠতে পারেন, সে সত্যের যথার্থতা মিলবে এ উপন্যাসের প্রত্যেক পরতে পরতে। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে এ দুই বৈপরীত্যের অপূর্ব সমন্বয় তাকে এক অনবদ্য চরিত্র রূপে পাঠকের চোখে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছে শফিক। নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান শফিকের আয়ের উৎস তার টিউশন। পেশায় মূলত সে অবন্তীর গৃহশিক্ষক হলেও গৃহশিক্ষকতার পাশাপাশি প্রেসমালিক রাধানাথ বাবুর কিছু ফাইফরমাশ খেটে দিন কাটে তার। এ কাজের বিনিময়ে অবশ্য কিছু নগদ অর্থের আগমন ঘটে তার হাতে। এ অর্থ কখনো সে নিজের কাজে লাগায়; আবার কখনোবা পাতানো ধর্মভাই চা-দোকানীর হাতে সমুদয় অর্থ তুলে দেয়। এমন খামখেয়ালিপনা করেই সময় কাটতে থাকে তার। ঘটনাচক্রে ক্যালেন্ডারের পাতায় ১৯৭৫ সাল এসে হাজির হয়। কথায় আছে, “নগর পুড়লে দেবালয় রক্ষা পায় না।” দেশের মত তার ভাগ্যাকাশেও তখন ঝুম বৃষ্টির মত আকস্মিক দুর্যোগ নেমে আসে। রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের দায়ভার এক সময় স্কন্ধদেশে এসে ভর করে। এছাড়া প্রেস ব্যবসার সুবাদে তৎকালীন প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন বিতর্কিত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও সে জড়িয়ে পড়ে নিজের অজান্তেই। বিচারের নামে শারীরিক অত্যাচারের পাশাপাশি নানা ধরনের মানসিক অত্যাচার চালানো হয় তার উপরে। ঠিক যেন, “রুটি মাগনা, ডাল ফ্রি।” শফিক কি পারবে এ দুষ্টচক্র থেকে নিজেকে মুক্ত করতে? সে কি পারবে নিজের স্বাভাবিক জীবনে আবার ফিরে আসতে? এমন নানাবিধ প্রশ্নের উত্তর জানবার একটাই উপায়—- বইটি পড়া!
উপরোক্ত দুইটি চরিত্র বাদেও আরেকটা চরিত্রের কথা কিঞ্চিৎ আকারে না বললে এ আলোচনা অপূর্ণ-ই রয়ে যাবে বলে আমার ধারণা। সে চরিত্রের নাম রাধানাথ বাবু। পেশায় একজন প্রেসমালিক রাধানাথ বাবুর দিনের অধিকাংশ সময়-ই প্রেসে কাটে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মকর্ম করে সময় কাটে তার। এ ধার্মিকতার জন্য কেউ কেউ তাকে সাধুপুরুষ বললেও অনেকে তা মানতে নারাজ। উঠতে-বসতে তিনি শফিককে গালমন্দ করলেও মৃত্যুর আগে তার সমস্ত সম্পত্তি শফিকের নামে লিখে দিয়ে যান। ঘটনাপ্রবাহ তখন নিজের চিরচেনা গতিপথ ফেলে পুরোপুরি নতুন এক গতিপথের পানে ধাবিত হতে থাকে। এর পাশাপাশি গল্পের প্রয়োজনে আরো কিছু কাল্পনিক চরিত্র ঔপন্যাসিক তার নিজের শক্তিশালী লিখনীর মাধ্যমে সৃষ্টি করেছেন। এসব চরিত্রের মধ্যে জাহাঙ্গীর, কালাম, রহিমা, ফণি, চা-দোকানী প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া প্রসঙ্গক্রমে তৎকালীন বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে, এমন অনেকের কথা-ই এ উপন্যাসে উঠে এসেছে। এদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু, জেনারেল জিয়া, বেগম জিয়া, কর্ণেল আবু তাহের, তাহেরপত্নী লুৎফা, আশরাফুন্নিসা, বেগম আয়েশা ফয়েজ, সিরাজ শিকদার ও তার বোন শামীম শিকদার, মেজর রশিদ, মেজর হুদা, খালেদ মোশাররফ, রিসালাত উদ্দিন, খন্দকার মুশতাক আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ লেকচারার আনোয়ার হোসেন, তৎকালীন কারা মহাপরিদর্শক নুরুজ্জামান, কর্ণেল শাফায়াৎ জামিল প্রমুখের নাম বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। এর পাশাপাশি ঔপন্যাসিক উপন্যাসের শুরুর দিকে নিজেকে উত্তম পুরুষের জবানিতে উল্লেখ করলেও পরবর্তীতে নিজেকে প্রথম পুরুষের জবানিতে তুলে ধরেছেন। চরিত্র সৃজনের ক্ষেত্রে কল্পনা ও বাস্তবতার মিশেল জন্ম দিয়েছে এক নবধারার, যা এ উপন্যাসটিকে আলাদাভাবে মহিমান্বিত করে তুলেছে।
উপন্যাসের বিষয়বস্তু, কাহিনী সংক্ষেপ ও চরিত্র বিশ্লেষণ— এত কিছু তো এতক্ষণ গড়গড় করে বলে গেলাম। এবার ভাষাশৈলী ও উপন্যাসের গঠনরীতি নিয়ে হরহর করে বলবার পালা! তবে মুখে যত সহজে বলে ফেললাম, কাজটা কিন্তু ঠিক ততোটাই কঠিন হবে। বরাবরের মত সহজ-সরল ও হৃদয়গ্রাহ্য ভাষায় হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাসের গল্প লিখে গিয়েছেন। তবে অন্যান্য উপন্যাসের মত এ উপন্যাসে সহজেই পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখবার কোনো প্রচেষ্টা এ লিখনীতে ছিল না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জাদুকরী ভাষায় লিখবার কারণে অনেকে তাকে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের দায়ে অভিযুক্ত করে থাকেন। এ লেখা পড়লে এ সমালোচকেরা একবারের জন্যে হলেও নড়েচড়ে বসবেন বলে আমার বিশ্বাস।
বুক রিভিউয়ের নামে বইটার নানাদিক নিয়ে অহেতুক টানাহেঁচড়া, কাটাকুটি তো নেহায়েত কম হলো না একেবারে। এবারকার পালা নিজের ভালোলাগার পাশাপাশি মন্দলাগা নিয়ে কিছু কথা বলবার। ঔপন্যাসিক এ বইতে তৎকালীন ইতিহাস নিরপেক্ষভাবে যে উপস্থাপন করেছেন, তা নিঃসন্দেহে নিরঙ্কুশ প্রশংসার দাবি রাখে। তবে নিজের পরিবারের ও আশেপাশের মানুষদের কথা বলতে গিয়ে লেখক এ নিরপেক্ষতা আর ধরে রাখতে পারেননি। নিজের ব্যক্তিগত ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে এ বিষয়ে বলতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেন তিনি। পরিণামে তার বর্ণনায় পক্ষপাতদুষ্টতা স্পষ্টতর হয়ে ওঠে। নিজের ব্যক্তিগত আক্রোশ তাকে এ ব্যাপারে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে বলে আমার ধারণা।
পরিশেষে এ কথা বলে এ নাতিদীর্ঘ আলোচনার যবনিকা টানতে চাই যে, ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস হিসেবে বইটি এককথায় দারুণ ছিল। তবে ঔপন্যাসিকের কিছুটা ব্যক্তিগত পক্ষপাতদুষ্টতার দরুন কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ সীমাবদ্ধতার কথা মাথায় রেখে অন্যান্য অনুরূপ গ্রন্থের সাথে মিলিয়ে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে পড়লে সহজেই এ সীমাবদ্ধতা দূর হবে, আর উপকৃত হবেন পাঠক!
.
বই পাঠের অভিজ্ঞতা সুখের হোক!♥