আপনার লেখা প্রকাশ করতে চান?
আমরা সবসময়ই নতুন চিন্তাকে স্বাগত জানাই। আপনার লেখা প্রকাশের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
লেখা জমা দিনপারমিতা হিম’র ‘নারগিস’ পড়ে শেষ করলাম।বইয়ের ফন্ট এমন যে, পড়তে বেশ আরাম লাগে। নিঃসন্দেহে উপন্যাসটি ভালো লেগেছে। ভালো লাগার মাত্রাটা এমন পর্যায়ে যে আমার বলা উচিত ‘হিংসা লেগেছে’। কারণ, এই রকমভাবে আমি লিখতে পারি না। উপন্যাসটি আমাকে একটুও হতাশ করে নি।তবে সামান্য কিছু গোঁজামিল মনের ভেতর খটকা তৈরি করেছে।
উপন্যাসের প্রথম বাক্য শুরু হয়েছে এভাবে, ‘’আমার বান্ধবী নারগিস জীবনে প্রথম ছ্যাঁকা খাইল।‘ এবং এরপর নারগিসকে ‘খুবই সংবেদনশীল মেয়ে’ হিসেবে পরিচয় করানোর চেষ্টা করা হয়েছে। অথচ পুরো উপন্যাসে আমরা দেখি নারগিস অত্যন্ত ডেসপারেট ও স্ট্রং একটি চরিত্র। সুতরাং এরকম একটি চরিত্র প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়ে সংবেদনশীল হয়ে যাবে, এটা কেমন খাপছাড়া লাগে। আবার কাহিনীর কথক, রোকসানা তাকে আমরা দেখি শান্ত শিষ্ট, অত্যন্ত নরম, ভদ্র, ভালো ছাত্রী। কিন্তু উপন্যাসের শুরুতেই যখন নারগিস ছ্যাঁকা খেয়ে ফেলে তখন ঐ রোকসানাকেই বেশ ডেসপারেট মনে হয়। এমন কি সে নারগিসের সাথে সিগারেট ও মদ্য-ও পান করে যা আসলে এই ‘রোকসানা’ চরিত্রের সাথে যায় না। খানিকটা আরোপিত লাগে এটুকু। এমন কি মায়ের কড়া শাসনে থাকা মেয়ে রোকসানা যখন তখন বান্ধবীর বাসায় চলে যাচ্ছে , বান্ধবীদের সাথে দেখা করছে, ঠিকই নারগিসের প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে যোগাযোগ রাখছে, এগুলো তার চরিত্রের সাথে ঠিক যায় না। রোকসানাদের আসলে এত বুদ্ধি আর সাহস আদৌ থাকে কি? কিংবা নারগিস, যে কিনা কোন বই টই কিচ্ছু পড়ে না, অথচ সারাক্ষণ জ্ঞানগর্ভ কথা বলে যাচ্ছে। তাও ঐ টুকু ক্লাস এইটে পড়া একটা মেয়ে নারগিস! ফ্রয়েড, কার্ল মার্ক্স, বিজ্ঞান কি না জানে সে! যদিও লেখকের লেখনির দক্ষতার জন্য এসব কিছুই খুব স্বাভাবিক মনে হয়। কোন কিছুই আরোপিত লাগে না আর। একটা স্বচ্ছ নদীর মত গল্প এগোতে থাকে তরতর করে।
শুধু নারগিসই নয়, নারগিসের পাশাপাশি নোভা কিংবা রুপার মত স্ট্রং চরিত্রের সাথেও পাঠকের পরিচয় হবে এ উপন্যাসের সুবাদে। তবে নারগিস এমন একটি স্ট্রং চরিত্র যার কাছ থেকে ছুটে বেড়িয়ে যেতে চাইলেও পারা যায় না, সেই নারগিসের কাছেই এসে কোন না কোনভাবে আটকে বাঁধা পড়ে যেতে হয়।
বইটি টিন এজ মেয়েরা তো বটেই, কট্টর নারীবাদী, কট্টর মোল্লাবাদী যে কেউ পড়তে পারেন ভালো লাগবে।প্রথম উপন্যাসেই পারমিতা তার জাত চিনিয়ে দিয়েছেন। কিছু উদ্ধৃতি দেবার লোভ সামলানো যাচ্ছে না।
*ছেলেদের যে রকম কোনো বাছবিচার নাই—একটা কিছু পাইলেই হইল, মেয়েরা সে রকম না। মেয়েদের ডিম্বাণু কয়টা? দুইটা। আর ছেলেদের? প্রতি সপ্তাহে যাদের কয়েক লাখ, কয়েক কোটি শুক্রাণু উৎপন্ন হয়—তাদের কোন দাম আছে? নাই। কারণ প্রয়োজনের তুলনায় যখন সাপ্লাই বেশি—তখন পণ্যের দাম কমে যায়—অর্থনীতির সূত্র। তাই ছেলেরা সিলেক্টিভ না, মেয়েরা সিলেক্টিভ। তার ডিম্বাণু দামি, তাই সে সেগুলোর মূল্য বোঝে।
(এইখানে পাঠকের খটকা লেগে যাবে। নারীর ডিম্বাণু নয়, ডিম্বাশয় দুইটা। লেখিকা সচেতনভাবেই এমন তথ্য দেন। নারগিসের মত চরিত্র এরকম ভুল তথ্য দিতেই পারে। এ নিয়ে প্রশ্ন করলে পরে আবার বই পড়ে আসল তথ্য জেনে নিতে বলে।)
*এখানে সবাই ভিকটিমের পক্ষে। তখন তোমার জন্য কাঁদবে যখন তুমি হয় রেইপড, না হয় জামাই তোমারে পিটায়, না হয় কোন না কোনোভাবে তুমি একজন লস্ট পার্সন। হেরে গেছো, তাই তোমার সাথে এসে কাঁদবে। তোমার অধিকারে জন্য চেঁচাবে। কিন্তু তুমি আজকে কোনো ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে নিজের মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে যাও—এরাই তোমাকে ছিঁড়ে ফেলবে।
*হাতাকাটা ব্লাউজ পরলে আর ক্লিভেজ একটু বেশি দেখাইলেই নারীবাদ হয় না, নারগিস। নারীবাদ হইল নারীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সেক্সুয়াল স্বাধীনতায় বিশ্বাস করা।
* সেক্সুয়ালিটিকে অস্বীকার করে কেমনে নারীবাদ হয়—এটাও বোঝে না।
* মানুষের জীবন খুব অদ্ভুত।দুইজন পাশাপাশি থেকেও একজন আরেকজনকে চিনতে পারে না। আবার ওদের দেখেন, দুইজন দুইজনের কিছুই জানে না, তবু কত আপন! নাম, ঠিকানা এগুলা আসলে কিছুই না মানুষের জীবনে, ফেইক জিনিস।এইগুলা জানলেই সব জানা হয় না।
* ডাক্তারদের এই একটা বিষয় আমার খুব হাসি পায়। যেন পৃথিবীতে আর কেউ কোন কিছুতে পাশ করে না। কোন রকম একটা এমবিবিএস পাশ করতে পারলেই সবখানে– প্রেমপত্রে, টয়লেটের টিকেটে, মুদির দোকানের বাকির খাতায় সবখানেই নিজের নামের আগে ডা. তাদের লিখতেই হয়!
‘নারগিস’ শুধু একটি নারীবাদী উপন্যাস নয়, বরং আরো বেশি কিছু।