আলবেয়ার কাম্যু ও বহিরাগতের বয়ান – ১
১২ই শ্রাবণ ১৪২৫ বঙ্গাব্দ
২৭শে জুলাই ২০১৮
১২ই শ্রাবণ ১৪২৫ বঙ্গাব্দ ॥ ২৭শে জুলাই ২০১৮
আপনার লেখা প্রকাশ করতে চান?
আমরা সবসময়ই নতুন চিন্তাকে স্বাগত জানাই। আপনার লেখা প্রকাশের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
লেখা জমা দিন“মানুষই একমাত্র প্রাণী যে নিজেকে মেনে নিতে চায় না।”
ট্রেনের তৃতীয় শ্রেণীর কামরায় রাতভর ক্লান্তিকর ভ্রমণ শেষে স্বামী ও তার গর্ভবতী স্ত্রী একটা টানা গাড়িতে আলজেরিয়ায় গ্রামে নিজেদের বাড়িতে ফিরছিলেন। ভ্রমণের ঝাঁকুনি ও বৃষ্টি ভেজা রাস্তার কারণে কষ্ট পাচ্ছিলেন নারীটি। যখন তারা নিজেদের বাড়ি ফিরলেন তিনি ব্যথায় নীরবে ককাতে লাগল। ডাক্তার আসলেন। গর্ভবতীর জন্য ফায়ার প্লেসের সামনে একটি বিছানা তৈরি করা হল। জন্মগ্রহণ করল শিশু। বৃষ্টির ধারা থেমে গেল। শিশুটি তার বাবা-মার সঙ্গে নতুন গৃহের নীরবতায় ঘুমিয়ে পড়ে।
এই শিশুর কাছে নীরবতা পরবর্তী জীবনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। নীরবতাকে মানুষের দ্বিধার জঠরে নিখিল করে তুলবেন তিনি, যার ভেতর ঘনীভূত মানুষের পরস্পরবিরোধী অনুভূতি। এই অনুভূতিই মানুষের অভিজ্ঞতা ও বেঁচে থাকার সার বস্তু।
শিশুটি পরবর্তী জীবনে লিখবেন আধা আত্মজৈবনিক উপন্যাস দ্য ফার্স্ট ম্যান- যেটি উদ্ধার হবে তাঁর মৃতদেহের সাথেই। সেই উপন্যাসে শুধু নিজের জন্মের মুহূর্তেরই বর্ণনা দেননি, তিনি ঘুরে এসেছেন বাবার কবরে, যেখানে তিনি কখনো যাননি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বাবা যুদ্ধে মারা যান। নিজের জীবন ও জীবনকে কেন্দ্র করে তাঁর কল্পনা কতদূর ছড়িয়ে ছিল তা সম্পূর্ণ জানার উপায় নেই আজ। কিন্তু আমরা অনুমান করি বাস্তব জীবনে তার অনুভূত বোধ যা তিনি অর্জন করেছিলেন গভীর প্রত্যয়ে- তার কাঙ্ক্ষিত জীবন যা তিনি যাপন করতে চেয়েছেন , জীবনের কাছে তার দাবি যা তিনি ছেড়েছেন স্বেচ্ছায়; সব তার জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কল্পনা আর বাস্তবের দেয়ালকে অতিক্রম করে এক অর্থহীন মানে এনে দিয়েছে।
তিনি বলেছিলেন ,”মানুষের জীবনে সুখের মেয়াদ অল্প এবং এটাই তার নৈতিকতার অন্যতম শর্ত। এ কারণে জীবন ও সুখের প্রতি মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা’।
তিনি বলেছিলেন ,’আমরা এই দ্বৈততা নিয়ে বাস করি যে- আমরা দুঃখের সময়কে গ্রহণ করি কারণ এটাও জানি সুখের সময় ফিরে আসবে। আবার আমরা এই ধরনের ধাঁধা পড়তে চাই না- আমি জানি আমার জীবনের অনেক গুরুত্ব আছে কিন্তু এটাও চিন্তায় আছে যে এটা অর্থহীন’
তিনি তার লেখায় আমাদের অভিজ্ঞতার অর্থ হীনতা, অযৌক্তিকতা ও দ্বৈততার অনুসন্ধান করেছেন। তার প্রশ্ন ছিল এই সব নিয়ে থাকা সত্ত্বেও আমরা কেমন করে বেঁচে আছি। আমরা যদি এই সব দ্বৈততার মধ্যে বেঁচে থাকার জন্য আশাপ্রদ কিছু খুঁজে না পেতাম- তবে আত্মহত্যা করতাম।
এই শিশুটিকে সারা পৃথিবী চিনবে আলবার্ট ক্যামু বা আলবেয়ার ক্যামু নামে। রুডইয়ার্ড কিপলিংকে বাদ দিলে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে কমবয়সী নোবেলবিজয়ী লেখক। তার চেয়েও বড় কথা পুঁজিবাদের দাপটে বিপন্ন মানব অস্তিত্বের আর্তি উঠে এসেছে যার লেখায় সাবলীল ভাবে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত হয়ে অনিবার্য ভাবে। যুদ্ধ ও সংকটে নিপতিত মানুষের অন্তর্গত সুর এতোটা নৈর্বেত্তিক ভাবে বিংশ শতাব্দীর কোন লেখকের লেখায় আর আমরা দেখি না।
চলবে…