বইমেলায় আড়ম্বরঃ প্রয়োজনীয়তা – অপ্রয়োজনীয়তা

বইমেলায় আড়ম্বরঃ প্রয়োজনীয়তা – অপ্রয়োজনীয়তা

২রা জ্যৈষ্ঠ ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

১৬ই মে ২০১৮

২রা জ্যৈষ্ঠ ১৪২৫ বঙ্গাব্দ ॥ ১৬ই মে ২০১৮

আপনার লেখা প্রকাশ করতে চান?

আমরা সবসময়ই নতুন চিন্তাকে স্বাগত জানাই। আপনার লেখা প্রকাশের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

লেখা জমা দিন

বছর ৫-৬ আগেও বইমেলায় বেশ ভিড় হত কোন একটি বিশেষ স্টলকে কেন্দ্র করে । এর কারণ ছিল প্রধাণত দু’টি।

১. জনপ্রিয় এক লেখকের বই সে স্টলে বেশি পাওয়া যেত লেখকের দর্শন ও অটোগ্রাফসহ ।
২. স্টলটির আকর্ষণীয় সজ্জার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলোর মোহ ।

ক্রেতা সমাগম বাড়ানোর আশায় অন্যান্য প্রকাশনীর মালিকরাও এ আইডিয়া কাজে লাগাতে শুরু করে । আলোচিত সেই প্রকাশনীর মত তারাও তাদের স্টলে জনপ্রিয় লেখকদের বসিয়ে অটোগ্রাফ দেয়ানো শুরু করতে থাকে( তা লেখকের ভালো লাগুক কিংবা না লাগুক!) । ফলাফল স্বরূপ যেসব স্টলে লেখকরা অটোগ্রাফ দেয়, সেসব স্টলে একটু বেশি রকমের ভিড় হওয়া শুরু হতে থাকে ।এই ভিড়-ভাট্টাকে কেন্দ্র করে নানান ইতিবাচক-নেতিবাচক খবর মিডিয়ায় প্রকাশ হতে থাকে । ফলশ্রুতিতে বর্ধিত জনসংখ্যার চাপে বাণিজ্যিক প্রকাশনীগুলোকে সোহরাওয়্যার্দী উদ্যানে স্টল বসানোর অনুমতি দেয়া হয় ।

জনাসমাগম বাড়ায় মেলার পরিসর বাড়ানো নিঃস্বন্দেহে বাস্তব সম্মত সঠিক সিদ্ধান্ত । তবে প্রশ্ন হচ্ছে – এই বর্ধিষ্ণু জনতাকে প্রকাশকরা কতটা আকৃষ্ট করতে পারছে কিংবা বই কেনায় উদ্বুদ্ধ করতে পারছে ?
প্রকাশকরা আকৃষ্ট করতে পারুক কিংবা না পারুক বই মেলাকেন্দ্রীক অন্যান্য বানিজ্য কিন্তু বেশ জমজমাট ।চড়া দামের অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে শুরু করে চুড়ি, ফিতা কি পাওয়া যায় না এখানে! কোনটাই দোষের না যদি না কাজের কাজটি ঠিক মত হত ।’মেলায় যাই রে’ টাইপ ছবি- পোস্ট – নিউজ পাওয়া যায় হাজার হাজার কিন্তু বইয়ের পোস্ট কিংবা সে তুলনায় হাতে গোনা। হালে যোগ হয়েছে উদ্ভট সব সাংস্কৃতিক নামক কর্মকান্ড ! প্রচলিত একটি প্রবাদ আছে- গাধাকে জোর করে পানিতে নামানো যায় কিন্তু পানি খাওয়ানো যায় না ।

স্টল আকর্ষণীয় করে জনসমাগম বাড়ানো গিয়েছে ঠিকই কিন্তু পাঠক বাড়ানো যায়নি । বই পড়া লোকের সংখ্যা বরাবরই কম । পাঠক হয়ে ওঠা একটা চর্চার বিষয় ।তবে প্রকাশকরা এক্ষেত্রে যা করতে পারতেন তা হল – আড়ম্বর দিয়ে অপ্রয়োজনীয় জনসমাগম বাড়ানোর চেষ্টা না করে বই পাঠকদের বই কেনার পথটি সহজ করা। সেটি অবশ্যই মানসম্মত বইয়ের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি সাধ্যমত বইয়ের মূল্য কমিয়ে কিংবা মূল্যছাড় দিয়ে। বইয়ের মূল্য সাধারন ছাত্র সামাজের নাগালের মধ্যে নিয়ে এলে কিংবা মূল্যছাড় বাড়ালে বই মেলার জন্য টাকা জমিয়ে রাখা ছাত্রীটি হয়ত আরো একটা বই বেশি কিনতে পারত কিংবা দাম বেশি বলে টিউশনির টাকা জমিয়ে বই কেনা ছাত্রটি পরেবার কিনব বলে মনকে সান্ত্বনা দিয়ে হলে ফিরত না কিংবা দাম বেশি বলে কেনা গেল না এ কারণে মায়ের হাত ধরে মেলায় আশায় শিশুটি হাওয়াই -মিঠাই খেতে খেতে সান্ত্বনা নিয়ে বাড়ি ফিরত না । এইসব ক্রেতাদের জন্য একটু ভাবলে বোধ করি প্রকাশকদের খুব একটা ক্ষতি হবে না ।

প্রথম প্রসঙ্গে চলে আসি । জনসামাগম বেশি হওয়া সেই স্টলটি প্রধাণত যে দু’টি পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন তার মধ্যে ২য় পদ্ধতিটি বেশিরভাগ প্রকাশনী অনুসরন করলেও ১ম পদ্ধতিটি অনুসরন করলে বোধকরি প্রকৃত ক্রেতার সংখ্যা আখেরে বাড়ত ।প্রকাশনীটি কিন্তু জনপ্রিয় সে লেখকের বড় রকমের পৃষ্ঠপোষকও ছিল । এটি অন্যান্য প্রকাশনীর জন্যও অনুসরনীয় হওয়া উচিত । ভালো পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে অনেক মেধাবী লেখকের লেখাও অনেক সময় আলোর মুখ দেখে না । আবার অনেক মানহীন লেখাতেও বাজার সয়লাভ হয়ে যায় ।

তাই প্রকাশনীগুলার উচিত এ বিষয়ে নজর দেয়া। সর্বোপরি, মেলার উদ্দেশ্য নিয়েও ভাবা উচিত সংস্লিষ্ট সকলের ।