ছবির দেশে কবিতার দেশেঃ সুনীলের নাটকীয় আত্মজীবনী

ছবির দেশে কবিতার দেশেঃ সুনীলের নাটকীয় আত্মজীবনী

২৯শে বৈশাখ ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

১২ই মে ২০১৮

২৯শে বৈশাখ ১৪২৫ বঙ্গাব্দ ॥ ১২ই মে ২০১৮

আপনার লেখা প্রকাশ করতে চান?

আমরা সবসময়ই নতুন চিন্তাকে স্বাগত জানাই। আপনার লেখা প্রকাশের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

লেখা জমা দিন

“ছবির দেশে কবিতার দেশে” পড়া শেষ করেছি। লেখক প্রথমেই জানিয়েছেন তিনি শিল্প সাহিত্য বিষয়ে তার ফ্রেন্স অভিজ্ঞতা বর্ণনা করবেন ব্যক্তি জীবনের মিশেলে।এবং তিনি ঠিক তাই তাই করেছেন।এত বেশি প্রসঙ্গের প্রতি অনুগত থেকেছেন যে অবাক হয়ে গেলাম।

মার্গারেট
এই বইটি পড়ে সকলেই ‘মার্গারিটা’ চরিত্রটি নিয়ে আপ্লুত হন কেন এখন বুঝতে পারছি, অসাধারণ কোমল এবং আবেগময়ী একজন নারী যিনি সুনীলকে ভালবেসেছিলেন সত্যিকারভাবেই, কিন্তু লেখক তার এ অমূল্য সম্পদকে গৃহবন্দী করতে চাননি বিধায় তাকে বিয়ে করা থেকে বিরত থেকেছেন, নিজের লেখালেখি আর ঘোরাঘুরি নিয়ে ব্যস্ত থাকার বিষয়ে অটল থেকেছেন। তাকে নিষ্ঠুর মনে হয়েছে সত্য, কিন্তু যেকোনো সাধারণ ঐ বয়সের ছেলেদের তুলনায় অনেক অন্যরকম ও মনে হয়েছে, তাছাড়া হয়তো বিয়ের জন্য মানসিক তৈরি ছিলেন না সুনীল।যাহোক, মার্গারিটের করুণ অনিশ্চিত পরিণতি অসম্ভব কষ্টের।যখনি সাদাকালো ছবিটা দেখি, মনে হয় এমন নিষ্পাপ একটা মেয়েকে কেন এভাবে হারিয়ে যেতে হয়? ঈশ্বর কোথায় তাহলে?? আরও অনেক অনেক প্রশ্ন।

অ্যালেন গীনসবার্গ
সাহসী একজন ভাগ্যবান এবং জনপ্রিয় আমেরিকান কবি।ব্যক্তিজীবনে যতই বিতর্কিত হন কবিতো কবি ই।সততাই আসল সম্পদ একজন কবির।যাহোক, তার চাঁছাছোলা কবিতাগুলোর বিষয় আমার ভেতর অপার আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

আমেরিকা
আমেরিকা সম্পর্কে পড়তে গিয়ে বিস্মিত হলাম। আমাদের দেশে এখন স্টেডিয়াম বা বড় কোন মিলনায়তনের বাইরে সারি সারি প্রাইভেট কার আর হুন্ডা দেখছি। আর সেই ষাটের দশকের শেষেই তারা সারি সারি ব্যক্তিগত হেলিকপ্টার দাড় করিয়ে রাখত, তাও আবার সেসবের মালিক কৃষকেরা।এ যেন আরেক পৃথিবীর অন্যরকম গল্প। কৃষি নীতির বদৌলতে আমেরিকান কৃষকরা বড়লোক তখন থেকে ই। শিল্পপতিরাও রাইজিং অবস্থায়। তখন আমাদের দেশের কৃষকদের কথা মনে হল।আজো বোধহয় তারা পেট ভরে ৩ বেলা ভাত খেতে পায় না…কী অদ্ভুত এই পৃথিবীটা।একপ্রান্তের কৃষকরা সেই ৫০ বছর আগে থেকেই ব্যক্তিগত হেলিকপ্টারে ঘুরে বেড়ায় আর আরেক প্রান্তের কৃষকরা গাড়ি চড়া তো দূরে থাক ৩ বেলা খেতেও পায় না ঠিকমত।

র‍্যাবো
আমি লিওনার্দো ডেকাপ্রিয়র ভক্ত। তো সিডিতে তার অভিনীত অনেক চলচিত্রের মধ্যে একটি ছিল “এক্লিপ্স”। ১৮ বছরের এক তরুণ প্রতিভাবান কবির জীবনী। সে আবার আরেকজন এর সমকামিতার স্বীকার হয়ে নিজেও সেরকম হয়ে যায়। তার এ বিতর্কিত জীবনাচরণ এবং প্রচণ্ড তির্যক পঙক্তিসমূহের জন্য তিনি প্রচণ্ড সমালোচিত ছিলেন এবং একসময় তাকে ফ্রান্সের সমস্ত সাহিত্য আড্ডায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।উল্লেখ্য মাত্র ১৮ বছর বয়সেই তিনি অসাধরণ লেখনী আর বিতর্কিত ভাষার জন্য সকলের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছিলেন।লিবারিজমকে প্রচন্ডভাবে ঘৃণা করতেন।এই তরুণ কবিটি ফ্রান্স থেকে আফ্রিকা ভ্রমণে যান হেটে হেটে এবং সেখানে তার অকাল প্রয়াণ ঘটে, কেউ কেউ মনে করেন তিনি হারিয়ে যান। যাহোক, চলচিত্রটি আমি দেখেছি কিন্তু ঠিক হজম করতে পারিনি তখন। সারমর্ম তখনো ধরতে পারিনি,  এই বইতে র‍্যাবোর কাহিনী পড়ে বুঝলাম যে গল্পটি আসলে র‍্যাবোর জীবন অবলম্বনে। ডেকাপ্রিওর অসাধরণ অভিনয় এ যেকোনো দর্শকের পক্ষে এই ঢেঁকি গেলা মনে হয় না অসম্ভব হবে। সম্ভবত “টাইটানিক”-এর আগে অথবা পরেই তিনি এটিতে অভিনয় করেছেন, অনেক তরুণ বয়সের ছবি।

লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি
এই শিল্পী মানুষটাকে আমার ছবি আঁকিয়ে ও বিজ্ঞানীদের ঈশ্বর মানতে ইচ্ছা করছে।চরম আধুনিক উৎকর্ষময় বিজ্ঞানের এমন কোন উপাদান নেই যার নকশা তিনি একে যান নি।হেলিকপ্টার, কামান, ডুবোজাহাজ, পিস্তল, বোমা, ফ্যান আরও কত কি…হাজার হাজার ব্যবহার্য জিনিসের নকশা…যা আমরা মনের সুখে মডেল বদলে বদলে ব্যাবহার করছি। এই মানুষটি না জন্মালে মনে হয় না পৃথিবী এত দূর আগাত। যাহোক, উনার জীবনের শেষ দিনগুলো কেটেছে ফ্রান্সে।অতএব, ফরাসীদের জাদুঘর ভর্তি হয়ে আছে ভিঞ্চি সাহেবের অসাধারণ সব কীর্তিতে।

ফ্রেন্স রস
ফ্রেন্স দের জীবন যাপনের নানা আঙ্গিক দেখতে পেলাম সাদা চোখে।সত্যি, ষাট বা সত্তুরের দশকেই মেয়েরা সেখানে স্বাবলম্বী, শিক্ষিত এবং আত্ম মর্যাদাসম্পন্ন। ৩ জন সত্তুরোর্ধ নারীকে একটি হোটেল নির্ঝঞ্ঝাটে চালাতে দেখে আমার ও ঈর্ষা হয়েছে লেখকের মত।ফ্রান্সে ছুটির দিনে কিছুই খোলা থাকে না।সেটা নিয়ে আছে বহু মজার কাহিনী। তারা তখন ও স্নানে ততটা অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি বলে সুনীল আক্ষেপ করেছেন। তখনকার দিনের হোটেলগুলোতে নাকি টয়লেট যদিও বা থাকতো বাথরুম একটি দুটির বেশি থাকতো না। তাদের এই স্নান জনিত বিশ্ব কুখ্যাত আলসেমির কারণেই জন্ম নেয় শত শত বিশ্ব বিখ্যাত ফরাসী সুগন্ধি কোম্পানির যাতে সুগন্ধি মেখে হলেও স্নান না করে গায়ের দুর্গন্ধ ঢাকা যায় ;)…ফরাসীরা সর্বভুক। চীনাদের মত খায় না এমন কিছু নেই। সুনীল সাগরতীরে গিয়ে যেই হারে খালি লবণ দিয়ে শামুক খেয়েছেন তাদের দেখাদেখি লিচুর মত টপাটপ, আমার ও চেখে দেখবার ইচ্ছা হচ্ছে প্রবল। ফ্রান্সের না হোক অন্তত কক্সবাজারের শামুক তো খাবোই। Please friends, Wish me Goodluck 🙂