আপনার লেখা প্রকাশ করতে চান?
আমরা সবসময়ই নতুন চিন্তাকে স্বাগত জানাই। আপনার লেখা প্রকাশের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
লেখা জমা দিনঅরণ্যে আমরা অপ্রস্তুত চলাফেরা করি না। একটি মারাত্মক সংকটে একা দাঁড়াতে গেলে অথবা কয়েক জন এক সঙ্গে দাঁড়াতে গেলে একটি বস্তুর অতি অবশ্যই দরকার হয় — সেটি বিশ্বাস। গহীন অরণ্যে পদচারণা করতে গেলে আমাদের বিশ্বাস করতে হয় নিজেকে এবং অপরকে। আমার উপাত্তের সঙ্গে বিশ্বাসের যে-সংজ্ঞা সবচেয়ে বেশি মেলে তা আমি খুঁজে পাই চার্লস ফেল্টম্যানের লেখায়। ফেল্টম্যান বিশ্বাসকে এভাবে তুলে ধরেন, ‘একটা কিছু সৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত, তা সফল হবে কিনা তা যখন অন্যের কাজের উপর নির্ভর করছে।’ তিনি অবিশ্বাসকে এইভাবে তুলে ধরেন, ‘আমার কাছে যা জরুরি তা এই মানুষের কাছে সুরক্ষিত থাকবে না।’
বিশ্বাস এমন বিশাল এক জিনিস যে একে মগজ বা হৃদয় দিয়ে বোঝা বড়ো কঠিন। ‘আমি তোমাকে বিশ্বাস করি না’ জাতীয় আলোচনা সচারচর ফলপ্রসূ হয় না। তাই আমি বিশ্বাস কথাটাকেই আরো গভীরে খনন করে বুঝতে চাই।
বিশ্বাস বলতে দেখা গেল সাতটি বিষয়কে আমরা বুঝি। আমার উপাত্ত থেকে মিলল এই উত্তর। একে ছোট করে বলতে গেলে বলব ‘সাহসী সক্ষম স্বনির্ভর’। এই সারসংক্ষেপ ব্যবহার করতে আমার বেশ লাগে কারণ এতে আমার মনে পড়ে যায় নিজেকে বিশ্বাস করা আর অন্যকে বিশ্বাস করা একটি সাহসী সক্ষম এবং স্বনির্ভর প্রক্রিয়া। এই কথা আমি ‘রাইজিং স্ট্রং’ (দৃপ্ত উঠে দাঁড়ানো) বইতে আগেই আলোচনা করেছি। আপন হবার প্রশ্নে ‘বিশ্বাস’-এর কথা যে ফিরে আসবে এতে আমি বিস্মিত হইনি।
সাধুতা (Integrity): স্বস্তির চেয়ে সাহস শ্রেয় আপনার কাছে। যা শ্রেয়, আর যা সহজ, মজাদার বা চটজলদি, এর মধ্যে আপনি শ্রেয়কে বেছে নেন। যা আপনি প্রচার করেন তা আপনি মেনেও চলেন বটে।
হলফ (Vault): যে কথা আপনাকে গোপন রাখতে বলা হয়েছে, তা আপনি পাঁচ কান করেন না। আমার জানতে হবে আমার এবং অপরের গোপন সংবাদ আপনার কাছে নিরাপদে আছে।
সীমারেখা (Boudaries): আপনি আমার সীমারেখাকে মান্য করে চলেন। যখন সেই সীমারেখা আপনার কাছে পরিষ্কার নয়, আপনি জিজ্ঞাসা করে জেনে নেন। দরকার হলে আপনি কোনও কথার উত্তরে ‘না’ বলতে দ্বিধান্বিত নন।
সদয় ভাব (Non-judgement): প্রয়োজনে সাহায্য চেয়ে আমি আপনাকে জানাতে পারি, আপনিও পারেন আমাকে জানাতে। আমাদের অনুভূতি নিয়ে আমরা নির্দ্বিধায় আলোচনা করতে পারি। কেউ কাউকে বিচারের কাঠগড়ায় না চড়িয়ে।
ক্ষমা (Generosity): অপরের কাজ, কথা আর অভিপ্রায় সম্পর্কে আপনি যা ভাবেন, তা পারতপক্ষে সবচেয়ে বেশি উদারতা নিয়ে ভাবেন। ক্ষমাসুন্দর আপনার দেখার দৃষ্টি।
স্বচ্ছতা (Accountability): আপনি আপনার ভুল স্বীকার করেন, ক্ষমা প্রার্থনা করেন, ভুলের মাশুল দেন।
নির্ভরশীলতা (Reliability): আপনি যে কথা দিয়েছেন সে কথা রাখেন। তার মানে আপনি আপনার ক্ষমতা আর সীমাবদ্ধতার দিকে তাকিয়েই কথা দিয়ে থাকেন। যা পারবেন না সেরকম কোনো প্রতিশ্রুতি আপনি দেন না। প্রতিশ্রুতি পালনের জন্য নানা জরুরি ব্যাপারকে জরুরি ভিত্তিতে কতোটা শীর্ষে রাখবেন সেই ব্যাপারে আপনার ভারসাম্যবোধ কাজ করে।
“নিজেকে বিশ্বাস”
অরণ্যে নিজকে বিশ্বাস করার মতো জরুরি আর কী আছে! ভয় আমাদের আনপথে নিয়ে যায় আর ঔদ্ধত্য — সে যে আরো মারাত্মক। আমরা আগের তালিকায় ‘সাহসী সক্ষম স্বনির্ভর’-এর সর্বনাম গুলিকে একটু পাল্টে দিলে দেখব তা কী ভাবে আমাদের নিজেদের প্রতি বিশ্বাসকে মেপে নেবার একটি দক্ষ হাতিয়ার হয়ে ওঠে।
সাধুতা (Integrity): আমি কি আমার ক্ষেত্রে শ্রেয়, আর স্বস্তিকর, সহজ বা চটজলদির মধ্যে শ্রেয়কে মেনে নিয়েছি? যা প্রচার করেছি তা কি আমি পালন করেছি?
হলফ (Vault): যে কথা আমাকে গোপন রাখতে বলা হয়েছে, তা আমি কি গোপন রেখেছি?
সীমারেখা (Boundaries): নিজের সীমারেখাকে কি আমি রক্ষা করেছি? কোনটা আমার অভিপ্রেত আর কোনটা নয় তা কি আমি পরিষ্কার করেছি?
সদয় ভাব (Non-judgement): প্রয়োজনে কি আমি সাহায্য চেয়েছি? সাহায্য চাইবার সময় কি আমি নিজেকে বিচারের কাঠগড়ায় চড়িয়েছিলাম?
ক্ষমা (Generosity): নিজের কাজ, কথা আর অভিপ্রায় সম্পর্কে আমি কি উদারতা দেখিয়েছি?
স্বচ্ছতা (Accountability): আমি কি আমার ভুল স্বীকার করেছি, ক্ষমা প্রার্থনা করেছি, ভুলের মাশুল দিয়েছি?
নির্ভরশীলতা (Reliability): আমি যে কথা দিয়েছি সে কথা কি রেখেছি?