
একটি গল্প ও “কপিরাইট” ল
১৩ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৫ বঙ্গাব্দ
২৭শে মে ২০১৮
১৩ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৫ বঙ্গাব্দ ॥ ২৭শে মে ২০১৮
আপনার লেখা প্রকাশ করতে চান?
আমরা সবসময়ই নতুন চিন্তাকে স্বাগত জানাই। আপনার লেখা প্রকাশের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
লেখা জমা দিন
জাপানে থাকাকালীন জাপানী সাহিত্য নিয়ে আলাদা করে খানিক আগ্রহ তৈরি করলাম। বিশ্ববাজারে মুরাকামিসমেত আরো কয়েকজন আছেন/ছিলেন। ইংরাজিতে প্রকাশিত/অনূদিত সেসব লেখক রাতের বেলা কোন শহরে বেশিদিন ঘুমান এই দিয়ে জাতীয়তা বা ভাষার প্রশ্ন বিচার করা যায় বটে, কিন্তু পুস্তকবাজারের রীতিনীতি খানিক বুঝলে “স্থান” নির্ণয় করা যায় না তা বুঝতাম। আমি খুঁজছিলাম “স্থানে” থাকা সাহিত্য, “গৌণ” বিষয়ে মনোযোগী সাহিত্য। আবার আমি জাপানী ভাষা একবর্ণ জানি না।
এরকম চলতে চলতে একদিন কোনো একটা লাইব্রেরিতে অক্সফোর্ড প্রেস/বিশ্ববিদ্যালয় সম্পাদিত একটা “জাপানী গল্পের ইংরাজি সংকলন” পেলাম। সেখানে থাকা গল্পগুলোর লেখকদের বাজারদর (স্থানীয়/বৈশ্বিক/সাংস্কৃতিক/যশোমূলক বা খ্যাতিমূলক/বৌদ্ধিক-বিচারিক) আমার জানা ছিল না। আমি এমন কোনো মনোযোগী ছাত্রও নই সাহিত্যের (কিছুরই আসলে)। কিন্তু যে গল্পটা এত বছর পরেও আমার মনে টানটান আছে তা হলো তাইকো বলে এক গল্পকারের একটা গল্প। আমি এর পরে কম করেও ২০ জন সাহিত্যের অনুরাগী বা শিক্ষার্থীকে এই লেখক সম্বন্ধে জানতে চেয়েছি যাঁদের কেউই বিশেষ চেনেন না এঁকে।
ওঁর লেখার বিষয়বস্তু এবং [অ]পরিচিতিতে আমার অনুসিদ্ধান্তে আসতেই হলো: তাইকো বিশেষ “জনপ্রিয়” লেখক (ছিলেন)) না; তাইকো জাপানের জাতীয়তাবাদের পরিপন্থী ‘ভাবধারার’ লেখক ছিলেন; তাইকো এমনকি সমাজতন্ত্রী ‘চিন্তাধারার’ লেখক ছিলেন; তাইকো কীভাবে-যেন অক্সফোর্ড সংকলনে জায়গা পেয়েছেন (হয়তো সম্পাদনা পরিষদে একজন আমার কিসিমের মাথা নিয়ে ছিলেন); তাইকো অক্সফোর্ড বাছাইয়ের শিরোপা না জিতলে কোনোকালেই আমার মনোজগতে আসতে পারতেন না।
এখন আমার (বা তাইকোর) এই [জীবন]কাহিনী থেকে কপিরাইট বিষয়ে দারুণ সব ভাবনা ভেবে ফেলা যায়:
ক) অক্সফোর্ড গম্ভীরভাবে কপিরাইট ফলো করেই জাপানী লেফট তাইকোকে বাছাই করেছেন
খ) জাপান গম্ভীরভাবে অক্সফোর্ড বাছাইকে জাপানী গল্পের যোগ্যতাই ভেবেছে, তাইকো আলাদা করে ফিল্টার্ড হবার কারণ ঘটেনি (ঘটলেও তা কপিরাইটের কারণে ঘটত না, তাইকোর চালচলন জাতীয়তাবাদী/ইম্পেরিয়াল জাপানের অনুগামী না বলে ঘটত)
গ) এই বাছাইয়ের কারণে জাপানের কোনো লেখকেরই বিশ্ববাজারে (মানে ইংরাজি সাহিত্যবাজারে) বাড়তি অনুপ্রবেশের রাস্তা সুলভ হয়েছে কিনা তা জানার সুলভ উপায় নেই। বরং ইতোমধ্যেই “বাজারে বিকোয়” এমন সাহিত্যিকেরাই প্রকাশিত/অনূদিত হতে থেকেছেন।
ঘ) যদি অপেক্ষাকৃত কম “পরিচিত” (জাপানে এবং বিশ্বে) লেখকরা এরকম সংকলনের পর বাড়তি সুযোগ পেয়েও থাকেন, তাইকো বা এরকম “লেফট”রা তার মধ্যে পড়েননি।
ঙ) আমি যে তাইকোর ওই মিনিবস্তু গল্পটাকে অনুবাদ করতে পারলাম তা গভীরভাবে “কপিরাইট” লঙ্ঘন করার কারণেই। কোনো অক্সফোর্ড কর্তার কাছেই বাংলাকরণের অনুমতি এক জীবনে আমি বের করতে পারার সম্ভাবনা কম ছিল।
চ) তাইকোর ওই গল্পটি যে বাংলায় কেউ তেমন পড়লেন না, এর সঙ্গে কপি-রাইট/লেফটের কোনো সম্পর্ক নেই; তাইকো যে “লেফট” (ছিলেন) সেই ঘটনারও সম্পর্ক নেই; আছে পুস্তক ও প্রকাশনার লোকাল বাজারের সম্পর্ক।
সারাংশ: যতক্ষণ ধরে নিয়ে না যাচ্ছে পুস্তকের স্বদেশী ও বিদেশী উৎপাদন বিষয়ে শিথিল ও ভিন্ন ফ্রেইমওয়ার্ক রাখা; অনুবাদের জন্য যত পারা যায় “অমান্যকারী” পজিশন রাখা; পিডিএফ-এর ক্ষেত্রে “গেরিলা” পদ্ধতি রাখা; আবার সংগ্রামী স্থানীয় লেখকের ক্ষেত্রে পাওনা/সম্মানী পাবার ব্যবস্থার জন্য প্রচেষ্ট থাকা —- এরকম একটা মিশ্র নীতি ছাড়া পড়ুয়া/জানুয়া/ভাবনশীলদের জন্য কোনো রাস্তা দেখি না।
সৌভাগ্যের কথা চীনের মত রাষ্ট্র এসব আইনে কোনোদিনই সই করেনি বলেই জানি; বাংলাদেশও বহুকাল দূরে দূরে থেকেছে; আর কপিরাইটের সর্বসম্মত একটা আন্তর্জাতিক “আইন” (তথা পিটাইব্যবস্থা) এখনও দাঁড়ায়নি বলেই জানি (দাঁড়িয়ে যাবে ) ।
সূত্রঃ বুক টক