গ্রন্থকথনঃ মেরী শেলী’র “ফ্রাঙ্কেনস্টাইন”

গ্রন্থকথনঃ মেরী শেলী’র “ফ্রাঙ্কেনস্টাইন”

২১শে জ্যৈষ্ঠ ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

৪ঠা জুন ২০১৮

২১শে জ্যৈষ্ঠ ১৪২৫ বঙ্গাব্দ ॥ ৪ঠা জুন ২০১৮

আপনার লেখা প্রকাশ করতে চান?

আমরা সবসময়ই নতুন চিন্তাকে স্বাগত জানাই। আপনার লেখা প্রকাশের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

লেখা জমা দিন

বইঃ ফ্রাঙ্কেনস্টাইন।
লেখকঃ মেরী শেলী।
অনুবাদঃ কবীর চৌধুরী।
বইয়ের ধরণঃ উপন্যাস।
প্রকাশকঃ সময় প্রকাশন।

গায়ের মূল্যঃ ১০০ টাকা।

ফ্রাঙ্কেনস্টাইন নামটা শুনলেই অনেকের চোখে ভেসে ওঠে এক বিশালাকার, কুৎসিত দর্শন, হিংস্র, প্রতিশোধপরায়ণ চেহারা।এর কারণ ১৯৩১ সালে নির্মিত হলিউড সিনেমা ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ যেখানে ব্রিটিশ অভিনেতা বোরিস কার্লফ খুব সুন্দরভাবে ঐ দানবাকৃতির চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলেছিলেন।তবে ঐ প্রাণী টি ফ্রাঙ্কেনস্টাইন ছিলেন না, মূলত ঐ দানবাকৃতি প্রাণীটির স্রষ্টা ছিলেন ভিক্টর ফ্রাঙ্কেনস্টাইন।

ব্রিটিশ লেখিকা মেরী শেলী ১৮১৮ সালে এই বিখ্যাত উপন্যাসটি রচনা করন যা পরবর্তীতে নাটকরুপেও মঞ্চায়িত এবং প্রশংসিত হয়েছে। ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘আধুনিক প্রমিথিউস’। এই উপন্যাসের গল্প তৈরি হয়েছে একজন অতিউৎসুক গবেষক ভিক্টর ফ্রাঙ্কেনস্টাইন এর নতুন একটি প্রজাতির প্রাণীর স্রষ্টা হিসেবে জগৎবিখ্যাত হওয়ার বাসনা থেকে।

রসায়ন শাস্ত্র অধ্যয়ন করে প্রাণ সঞ্চারের এক অভূতপূর্ব ফর্মুলা আবিষ্কার করেন ভিক্টর ফ্রাঙ্কেনস্টাইন।তারপর তিনি আগ্রহী হন নিজে আলাদা একটা প্রজাতির প্রাণী তৈরি করতে। তিনি মানুষের আকৃতির প্রাণী তৈরি করতে চেয়েছিলেন তাই মানুষের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করতে থাকেন এবং একসময় তিনি প্রায় আট ফুট আকৃতির খানিকটা মানুষের মতন দেখতে একটি কাঠামো দাড় করান।কিন্তু ঐ কাঠামোতে প্রাণসঞ্চারের পর প্রাণীটির বিভৎস রুপ দেখে ফ্রাঙ্কেনস্টাইন নিজেই ভীষণ ভয় পেয়ে যান এবং গবেষণাগার থেকে পালিয়ে যান।পরবর্তীতে তিনি এই প্রাণীটিকে তাড়িয়ে দেন এবং এটা থেকে দূরে চলে যান।

তারপর একদিন হটাৎ ফ্রাঙ্কেনস্টাইন খবর পান তার ছোট ভাই উইলিয়াম নির্মমভাবে খুন হয়েছে।সে খুব দ্রুত ফিরে গিয়ে সব ঘটনা জেনে খুন হওয়া যায়গাতে যায় এবং সেখানে গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন যে এই নির্মম হত্যাকান্ড আর কেউ ঘটায়নি এটা তারই নিজের সৃষ্ট প্রাণীর কার্য।তিনি তার সৃষ্ট প্রাণীটির সাথে সাক্ষাতের চেষ্টা করেন এবং তার দেখাও পান। অতঃপর সেই প্রাণীটি তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় হিসেবে দাবী করে এবং ফ্রাঙ্কেনস্টাইনকে অনুরোধ করে তার এতদিনের টিকে থাকার গল্প শুনতে।

তারপর ফ্রাঙ্কেনস্টাইন এর সৃষ্ট সেই দৈতাকার প্রাণী কিভাবে এতদিন বনে থেকে খাদ্য সংগ্রহ করেছে, মানুষের সাথে মেশার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে, পড়তে শিখেছে এবং কিভাবে মানুষকে তার শত্রু ভাবতে শুরু করেছে তার সব বর্ণনা বলতে থাকে।মূলত বইটির সবচেয়ে ঘটনাবহুল এবং আকর্ষণীয় অংশই এটি। নানান ঘটনার অবতারণা এখানে।দৈত্যাকার প্রাণীটি একদিন জন মিল্টনের প্যারাডাইজ লস্ট বই পড়ে জানতে পারে আদম নামে একজনকে অন্য একজন স্রষ্টা সৃষ্টি করেছিল এবং তার জন্য ইভ নামে একজন নারী সঙ্গীও সৃষ্টি করেছিল।আর এইটা উল্লেখ করেই সে দাবী করে ফ্রাঙ্কেনস্টাইনকে এখন তার জন্য তারই মতন দানবাকৃতির একজন নারীকে সৃষ্টি করতে হবে না হলে সে ফ্রাঙ্কেনস্টাইনসহ তার বন্ধু, প্রেমিকা এবং পরিবারের সব সদস্যকে খুন করে প্রতিশোধ নেবে এবং ধ্বংশলীলায় মেতে উঠবে।

ফ্রাঙ্কেনস্টাইন তখন সদুপায় খুঁজে না পেয়ে ঐ একইরকম একটি নারী প্রাণী সৃষ্টি করার কাজ শুরু করে।এভাবেই এগিয়ে চলতে থাকে কাহিনী। সৃষ্টিই যে স্রষ্টার প্রভু এবং গল্পের শেষ টুইস্টটুকু জানতে পড়ে ফেলুন আলোচিত এই উপন্যাসটি। ৭০ পৃষ্ঠার ফিকশনধর্মী এই উপন্যাসকে রেটিংয়ে ১০ এর ভিতরে ৭ দেওয়া যায় অনায়াসে।