ব্রাজিল – জীবন যেখানে ফুটবলের নান্দনিকতায় মোড়া
২১শে আষাঢ় ১৪২৫ বঙ্গাব্দ
৫ই জুলাই ২০১৮
২১শে আষাঢ় ১৪২৫ বঙ্গাব্দ ॥ ৫ই জুলাই ২০১৮
আপনার লেখা প্রকাশ করতে চান?
আমরা সবসময়ই নতুন চিন্তাকে স্বাগত জানাই। আপনার লেখা প্রকাশের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
লেখা জমা দিনচোখ বন্ধ করে একবার ভাবুন, ব্রাজিলিয়ান ফুটবল। কী মাথায় আসছে? সমূদ্রতট, জিশুর মূর্তি, ফাভেলার ভেতরে চিকন এলোমেলো রাস্তা। গোল কিংবা বিশ্বকাপ, দুটোর একটাও মনে আসেনি, আসেনি হেক্সা মিশনের কথা।
ব্রাজিল ফুটবলের কথা মনে হলে কল্পনায় ভাসে জীবন। সাও পাওলোর কানা গলিতে বেঁটে খাটো কোঁকড়া চুলের পুঁচকে সান্তোসের ফুটবল খেলার চেষ্টাটাই আসলে জোগো বনিতো।
কানা গলির ছোট দেয়াল, ওখানে ফিফার রেগুলেশন গোলপোস্টের থেকেও কম জায়গা। শক্ত কংক্রিটের রাস্তায় এখানে ওখানে দাঁত বের করে হাসছে অবহেলা। ওটাই ব্রাজিলের ছেলে-পুলেদের খেলার মাঠ। জোরে উঁচিয়ে মারাও যাবেনা, বুড়ি সানব্রিগানজার জানালার কাঁচ ভাঙলে আর রক্ষে নেই। বলটা তো যাবেই, কান মলাও খেতে হতে পারে। সাথে তো মুফতে আছে খিস্তি।
ভাঙ্গা রাস্তা, কানা গলি ওসব জায়গায় খেলে খেলে ব্রাজিলের ফুটবল-শিশুদের এক অব্যক্ত রিফ্লেক্স তৈরি হয়। ফুটবলটা ওদের কাছে জীবনের মত, না না বাঁকে হাজার চমক। ফুটবলের বেয়াড়া গতিবিধিও তাই সামলে নিতে জানে ওরা, ছোটবেলা থেকেই শেখে। জীবনের মাঠে শেখা চমক চলে যায় খেলার মাঠে।
কোনদিন স্কুল পালিয়ে খেলার জন্য ফুটবলে লাথি হাঁকালে মেলে বাপের কিল-চড়; আবার সেই বাপই একসময় অশ্রুভেজা চোখে সবাইকে বলে বেড়ান, “ছেলে আমার সান্তোসে খেলবে, দেখে নিও”। কিংবা টিভির খবরে কিশোর সান্তোস দেখতে পাবে পুলিশের গুলিতে লাশ হওয়া ছোট বেলার ফুটবলের সাথীর লাশ।
পুঁচকে সান্তোস বড় হয়েও ফুটবলটা বুড়ি সানব্রিগানজার জন্য খেলে। মেরিন ড্রাইভে দিয়ে সাইকেলে চলে যাওয়া তাম্র কিশোরীর চকিত চাউনির জন্যে খেলে। দুটো খাবার খুঁজতে যেয়ে বখে যাওয়া গ্যাব্রিলিয়োর জন্য গোলটা উৎসর্গ হয়, ডিফেন্ডারদের চোখে ধন্ধ লাগিয়ে পায়ের টোকায় গোল দেওয়া শিখেছিলই তুলিওর কাছে।
সাওপাওলোর বস্তির রাস্তায় এখন টুরিস্টদের পকেট কাটে তুলিও। সান্তোস যেদিন বিশ্বকাপে টোকা দিয়ে গোল করবে, ওটা তোলা থাক তুলিওর জন্য।
সান্তোস বড় হয়ে নেইমার দ্য সিলভা সান্তোস হয়ে বিশ্বকাপের মাঠে। রাস্তাটা ওর একার ছিলনা, অনেক ব্রাজিলিয়ানের টোটকা ওর পায়ে, ফ্রি কিকটা নেবার একটা ব্রহ্মাস্ত্র জানা আছে তার, বুড়ো আইসক্রিম বিক্রেতা ওকে শিখিয়েছিল একদিন। দু পায়ে বল নিয়ে খেলতে ব্রাজিলের ছোট বাচ্চাও জানে, ওটা সাম্বার তালে পা মেলাতে মেলাতে একদিন হয়ে যায়।
এত কথা সবাইকে বলা যায়না, দ্রুত লয়ের খেলার দর্শক আর স্পন্সরের ওসব শোনার সময় নেই। তাই সংবাদ সম্মেলনে ঈশ্বর আর ব্রাজিলকে শুধুই ধন্যবাদ জানানো হয়। বাকি ধন্যবাদ খেলার জন্য তোলা থাকে। ফ্রি কিকটা থাকুক মিগেলের, ওটা দেখে চোখের পানি মুছবে মিগেল। আরেক কোঁকড়াচুলো পকেট সাইজ ফুটবলারকে দাম না নিয়েই দিয়ে দেবে আইসক্রিম। বুড়ি সানব্রিগানযার চশমার ফাঁকে দিয়ে কষ্ট করে হলেও দেখবেন কিক অফ, হয়তো মনে মনে বলবেন, “কার বাড়ির জানালা যে ভাঙে?” ব্রাজিলের সবার খেলায় আসলে এভাবেই থাকে ব্রাজিল। এখানেই ব্রাজিলের ফুটবলের প্রাণপাখি, এটাই জোগো বনিতো।